যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা গ্রামে মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় ইউপি পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিজানুর রহমানের বাড়ির পেছনের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয় মাত্র ১৩ বছরের অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্রী মাহমুদা সিদ্দিকার মরদেহ।
এটি পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে।
![]() |
যশোরের মণিরামপুরে অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার এলাকায় চাঞ্চল্য। ছবি: সংগৃহীত |
কীভাবে নিখোঁজ হলো মাহমুদা?
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পথে মাহমুদা স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী মেহেদী হাসানের দোকানে যায়। সেখানে রুটি খাওয়াকে কেন্দ্র করে দোকানদারের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। পরে মুদি ব্যবসায়ী বিষয়টি মাহমুদার মাকে জানান। মা ঘটনাস্থলে এসে মেয়েকে মারধর করে বাড়িতে নিয়ে যান।
এরপর থেকেই মাহমুদা নিখোঁজ ছিল। রাতভর খোঁজাখুঁজি করেও পরিবারের সদস্যরা বা এলাকাবাসী তাকে খুঁজে পাননি।
মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়ির পেছনের পুকুরে স্থানীয়রা চুল ভেসে থাকতে দেখে। পরে মরদেহ উদ্ধার করে নিশ্চিত হন যে সেটি নিখোঁজ মাহমুদার।
চাঞ্চল্যের বিষয় হলো, মরদেহ উদ্ধারের সময় কিশোরীর শরীরে কোনো পোশাক ছিল না। পরে একই পুকুর থেকে জামা ও ওড়না উদ্ধার করা হয়।
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনায় পুরো রোহিতা গ্রামে নীরবতা নেমে এসেছে। স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, এটি নিছক ডুবে যাওয়া নয়; এর পেছনে রহস্যজনক কিছু থাকতে পারে।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, একজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী যিনি সাঁতার জানতেন না, তিনি কীভাবে এমনভাবে পুকুরে পড়লেন? এবং কেন পোশাক আলাদা হয়ে গেল?
পরিবারের বক্তব্য
মাহমুদার বাবা মাওলানা আনিসুর হক বলেন:
"আমার মেয়ে সাঁতার জানতো না। তাই সে পানিতে পড়ে মারা গেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। তদন্তেই সব প্রকাশ পাবে।"
পুলিশের বক্তব্য
মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাবলুর রহমান খাঁন জানান:
"আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।"
রহস্যজনক দিকগুলো
-
কিশোরীর শরীরে কোনো পোশাক না থাকা
-
একই পুকুর থেকে জামা ও ওড়না আলাদা হয়ে উদ্ধার হওয়া
-
সাঁতার না জানলেও মরদেহ ভেসে ওঠা
-
ঘটনার আগের দিন মায়ের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক ও শারীরিক শাস্তি পাওয়া
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছে, কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পরিবারকে আরও সচেতন হতে হবে। আবার অনেকে বলছে, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়; এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে।
👉 শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও জানতে চাইলে পড়তে পারো ইউনিসেফ বাংলাদেশ।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা
এই ঘটনার পর মণিরামপুরসহ যশোর জেলায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক অভিভাবক বলছেন, তারা এখন থেকে সন্তানদের প্রতি আরও খেয়াল রাখবেন।
তদন্ত প্রক্রিয়া
পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে আসলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ পরিষ্কার হবে।
পরিবার ও দোকানদারের বয়ানসহ সব দিক পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
উপসংহার
যশোরের মণিরামপুরের এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্য শিক্ষণীয়। একটি প্রাণ রহস্যজনকভাবে শেষ হয়েছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে।
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্ন ১: কিশোরী মাহমুদার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কী?
উত্তর: এখনো নিশ্চিত জানা যায়নি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
প্রশ্ন ২: এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
উত্তর: তারা বলছে এটি নিছক ডুবে যাওয়া নয়, এর পেছনে রহস্যজনক কিছু থাকতে পারে।
প্রশ্ন ৩: পরিবার কী বলছে?
উত্তর: পরিবার বলেছে, মেয়েটি সাঁতার জানতো না, তাই পানিতে পড়ে মারা গেছে।
প্রশ্ন ৪: ঘটনার সামাজিক গুরুত্ব কী?
উত্তর: এটি শিশুদের নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য ও পারিবারিক আচরণ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
0 মন্তব্যসমূহ