Header Ads Widget

লতিফ সিদ্দিকী বললেন: আদালতের প্রতি আমার আস্থা নেই | দৈনিক যশোর 24

ঢাকা সিএমএম আদালতের সামনে লতিফ সিদ্দিকীর বিস্ফোরক মন্তব্য
সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী আজ আদালতে হাজির হয়ে বললেন, “আদালতের প্রতি আমার আস্থা নেই।”


ঘটনাস্থল

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে প্রিজন ভ্যানে আনা হয় আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন ও সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্নাকে। ভ্যানটি হাজতখানার দিকে যায়।

দেড় ঘণ্টা পর তাঁরা হাজতখানা থেকে বের হন।

লতিফ সিদ্দিকী: মাথায় পুলিশের হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট; দুই হাত পেছনে (হাতকড়া পরানো হয়নি)।

হাফিজুর রহমান: মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, ডান হাতে হাতকড়া, বাঁ হাতে বাংলাদেশের সংবিধান; সংবিধান উঁচু করে ধরে রাখেন।

পরে তাঁরা আসামির কাঠগড়ায় নেওয়া হয়।


আদালতের প্রতি আস্থা নেই: লতিফ সিদ্দিকী

একজন আইনজীবী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে লতিফ সিদ্দিকীর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতে চান। লতিফ সিদ্দিকী বলেন,

“আদালতের প্রতি আমার কোনো আস্থা নেই। এ জন্য আমি কোনো আইনজীবী নিয়োগ দেব না।”

আইনজীবী জানতে চান, তিনি নিজে আদালতে কোনো বক্তব্য দেবেন কি না। লতিফ সিদ্দিকী বলেন,

“না, আদালতের কাছেও কোনো বক্তব্য দেব না।”

সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে এজলাসে আসেন সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক। তখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌফিক হাসান লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।


রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ

তৌফিক হাসান আদালতে জানান, গতকাল বেলা ১১টার সময় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কয়েকজনকে ঘেরাও করে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়। সেখানে বক্তব্য দেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তদন্তে জানা গেছে, তারা “মঞ্চ-৭১” নামের সংগঠন পুঁজি করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শামসুদ্দোহা সুমন জানান, আসামিরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সুবিধাভোগী। ১৭ বছর ধরে তারা বিভিন্নভাবে সুবিধা নিয়েছেন।

“আসামিদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা। আমরা শিগগির তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করব।”


হাফিজুর রহমানের বক্তব্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান আদালতে সংবিধান উঁচু করে বলেন,

“আমাদের কোনো অধিকার দেওয়া হয়নি। আমাকে গ্রেপ্তার করার কারণ জানানো হয়নি। আমাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার না করে আমাদের গ্রেপ্তার করেছে। আমাদের সম্মানহানি হয়েছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের অনেক অংশ মিথ্যা।


সাংবাদিক মনজুরুল আলমের বক্তব্য

সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন,

“মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলা কি অপরাধ? আমরা সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে জড়িত নই। সাংবাদিকের হাতে কেন হাতকড়া?”

তার আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন যোগ করেন,

“আলোচনার সময় দেশের খ্যাতিমান অধ্যাপক, সাংবাদিক ও লেখকদের উপর মব সৃষ্টি করা হয়। পুলিশ নিরীহ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেছে। আসামিদের জামিন দেওয়া হোক।”


আদালতের সিদ্ধান্ত

লতিফ সিদ্দিকী কোনো বক্তব্য দেননি।
আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে প্রায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ অন্যান্যদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

হাজতখানায় যাওয়ার সময় হাফিজুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধান উঁচু করে ধরে বলেন,

“মুক্তিযুদ্ধের সংবিধান আমরা রক্ষা করব। ৩০ লাখ শহীদ আর ৫ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এই সংবিধান। বাংলাদেশ আমরা রক্ষা করব।”

সাংবাদিক মনজুরুল আলম তার হাতকড়া উঁচু করে বলেন,

“আপনারা হাতকড়া পরাবেন, আবার দেখাতে দেবেন না, এটা কেমন কথা।”

পরে তাঁদের প্রিজন ভ্যানে করে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।


কী ঘটেছিল?

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন লতিফ সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমান ও অন্যান্যরা। আলোচনা শীর্ষক ছিল:
“আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান”

গোলটেবিল শেষ হওয়ার পর একদল ব্যক্তি মিছিল নিয়ে মিলনায়তনে ঢুকে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে। পরে পুলিশ তাদের তুলে নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে।

📌 আরও পড়ুন:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ