Header Ads Widget

সরকার পতনের এক বছর পর ফের সক্রিয় সোনা পাচার চক্র | যশোর সীমান্তে বিজিবির অভিযান

সরকার পতনের প্রায় এক বছর ঘাপটি মেরে স্থবির থাকার পর সোনা পাচার চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত এখন আবারও স্বর্ণ চোরাচালানের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিজিবির হাতে একের পর এক বড় চালান ধরা পড়লেও মূল গডফাদাররা এখনও অদৃশ্য। এতে সীমান্ত এলাকায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।

জব্দ করা সোনার বার
সরকার পতনের এক বছর পর ফের সক্রিয় সোনা পাচার চক্র দৈনিক যশোর 24 ছবি: সংগৃহীত

সোনা পাচারের সাম্প্রতিক চিত্র

গত এক মাসে যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া সীমান্তে একাধিক অভিযান চালায় বিজিবি।

  • যশোর শহরতলী থেকে ১৫টি সোনার বার উদ্ধার (মূল্য ১১ কোটি টাকা)।

  • চুয়াডাঙ্গা, মহেশপুর, বেনাপোল থেকে ৬৭টি সোনার বার জব্দ (মূল্য ১২ কোটি টাকা)।

  • খুলনা-যশোর মহাসড়ক থেকে কয়েক দিনে ৫+৫+৫=১৫টি সোনার বার ধরা পড়ে।

  • চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে পুকুরের ভেতর থেকে উদ্ধার হয় ২১টি স্বর্ণবার।

  • ঝিনাইদহ মহেশপুর সীমান্তে ১৫টি বার উদ্ধার হয়, যার বাজারমূল্য ২.৫ কোটি টাকা।

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসেই উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটির বেশি

কেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পাচারের রুট?

বাংলাদেশ-ভারতের ৩২টি জেলার সীমান্ত থাকলেও পাচারকারীরা মূলত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে বেশি ব্যবহার করে।
✔️ কারণ ১: কলকাতার নিকটবর্তী হওয়ায় দ্রুত ডেলিভারি দেওয়া যায়।
✔️ কারণ ২: যাতায়াত সহজ, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত।
✔️ কারণ ৩: সীমান্তে টহল থাকলেও লম্বা বর্ডারের কারণে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর তথ্য বলছে, শুধু যশোর ব্যাটালিয়ন সীমান্তেই প্রতিমাসে কোটি টাকার পণ্য ও সোনা জব্দ করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা

যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন—

“বিজিবির বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত টহল ও তথ্যভিত্তিক অভিযানে আমরা সোনা, মাদক ও অন্যান্য চোরাচালান প্রতিরোধে সফল হচ্ছি। সীমান্তে এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”

তবে মাঠ পর্যায়ের অফিসাররাও স্বীকার করেছেন, বহনকারীরা ধরা পড়লেও মূল সিন্ডিকেট এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

নেপথ্যের গডফাদাররা অদৃশ্য

প্রতিটি অভিযানে দেখা যায়, মূলত ডেলিভারি ম্যান, ভাড়াটে শ্রমিক বা সাধারণ পরিবহনকর্মীরাই ধরা পড়ে।
কিন্তু যারা কোটি কোটি টাকার চালান সরবরাহ করে, সেই রাঘববোয়াল গডফাদাররা ধরা পড়ে না।

  • স্থানীয় সূত্র বলছে, রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণে এরা অনেক সময় অদৃশ্য থেকে যায়।

  • পাচারের অর্থনীতি এত বড় যে, এতে ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।

আন্তর্জাতিক প্রভাব

বাংলাদেশে ধরা পড়া বেশিরভাগ সোনা আসলে ভারতের বাজারের জন্য পাচার হয়।
ভারতের স্বর্ণচাহিদা বেশি হওয়ায় চোরাকারবারীরা বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে।
✔️ ভারতের কলকাতা ও মুম্বাইয়ের জুয়েলারি মার্কেটে এই সোনার বড় অংশ সরবরাহ করা হয়।
✔️ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে যাওয়া সোনার বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সমন্বয় ছাড়া এ সমস্যা পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব নয়।


অর্থনৈতিক ক্ষতি

স্বর্ণ পাচারের কারণে—

  • সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে

  • বৈধ আমদানিকারকরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না।

  • পাচারের টাকা ব্যবহার হচ্ছে অপরাধ ও কালো অর্থনীতিতে

উপসংহার

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত আবারও সোনা পাচারের রুট হিসেবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিজিবির অভিযান বাড়লেও পাচার পুরোপুরি থামানো যায়নি। এখন সময় এসেছে মূল হোতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং সীমান্তে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের।

প্রশ্নোত্তর (Q&A)

প্রশ্ন ১: কেন যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সোনা পাচারের রুট?
উত্তর: কলকাতার নিকটবর্তী হওয়া, সহজ পরিবহন ও দীর্ঘ সীমান্ত থাকার কারণে এই অঞ্চল পাচারের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রশ্ন ২: আগস্ট মাসে কত সোনা ধরা পড়েছে?
উত্তর: বিজিবির তথ্য অনুযায়ী আগস্ট মাসেই ৩০ কোটির বেশি মূল্যের সোনা জব্দ হয়েছে।

প্রশ্ন ৩: ধরা পড়া পাচারকারীরা কারা?
উত্তর: সাধারণত ডেলিভারি ম্যান ও বহনকারীরা ধরা পড়ে। গডফাদাররা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

প্রশ্ন ৪: পাচার ঠেকাতে কী জরুরি?
উত্তর: সীমান্তে আধুনিক নজরদারি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং মূল সিন্ডিকেট ভাঙা সবচেয়ে জরুরি।

– “বেনাপোলে স্বর্ণসহ পাচারকারী আটক” (আগের নিউজ পোস্টে লিঙ্ক দেবে)।
👉 External Link Idea:
– বিজিবি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: https://www.bgb.gov.bd

📌 আরও পড়ুন:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ